এক।
ডিজেল-পোড়া বিকেল থেকে ভেসে আসছে অভিশাপ।
ভেসে আসছে নীরক্ত সুর পানের দোকান থেকে,
শিরীষ কাগজে ঘষা ক্ষয়াটে মুখ নামছে বহুতল অফিস থেকে
টাইয়ের ফাঁস খুলতে খুলতে --
টাইয়ের সাথে বেঁধে ছেলেগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে
তাদের আখেরের ফানুসগুলো,
উড়িয়ে দিচ্ছে তাদের টু বিএইচকে, ইএমআই ছাপ গাড়ি, পাটায়া আর সফেন নারীর স্বপ্ন।
আর ফুচকার শালপাতার মতো ব্যবহৃত মেয়েরা
বাড়ি ফিরছে রাত করে,
ঘাড় ভাঙা রাজহংসীর বেদনায়,
অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে সরীসৃপের পেট চিরে আসতে আসতে তারা না দেখার ভান ক'রে
পাড়ার চেনা বাড়িগুলো থেকে উঁকি মারা যৌন ইশারা।
দুই।
টেলিভিশনের নীল আলো, আরো নীল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সিরিয়ালের সংসারে,
শপিং মল, সেরেল্যাক বেবি আর লাল-নীল প্রজাপতিদের কথা ভাবতে ভাবতে
ঘুমিয়ে পড়ছে মেয়েগুলো।
আর ঘরে ফেরা ছেলেরা পরে নেয় পাটে পাটে ভাঁজ করে রাখা মেরুদন্ড
তাদের কর্পোরেশনের ভ্যাটের মতো উপচে পড়া মাথার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে
রাশি রাশি পোকা,
শ্বাপদের মতো বসে থাকতে থাকতে ছেলেগুলো হিসেব কষে যোগের সঙ্গে ভাগের
ভাগের সঙ্গে গুনের আর গুনের সঙ্গে বিয়োগের সম্পর্ক,
টেলিভিশনে পাঠানো পরকীয়া চিঠিতে ভেসে আসছে তাদের ঘুমপাড়ানি গান।
তিন।
পাড়ার রকে মুড়ি দিয়ে শোয় নিষ্কর্মা সময়
রাত হাতে পায়ে বাড়ে নেড়ি কুকুরের উদ্ধত প্রশ্রয়ে,
জল ঘেরা বারান্দায় একা বসে থাকতে থাকতে
বৃদ্ধারা বসন্তের সাথে গুলিয়ে ফেলছে রজঃ স্রাবের,
গুলিয়ে ফেলছে স্বাধীনতার সাথে খুন্তির,
গুলিয়ে ফেলছে ঘুমের ওষুধের সাথে রূপকথার,
আর বৃদ্ধরা শেষ পাতে মধু খেয়ে কুলকুচো করে উগড়োয় নিম।
চার।
গোলাপজল আজ ধুইয়ে দাও ডিজেলের গন্ধ মেঘের গা থেকে
বহুতল অফিস বাড়ি আজ এসো
হাঁটুগেড়ে বোসো
শহরের নীচু বাড়িগুলির সামনে
এসো ঘোড়ার খুঁড়ে লেগে থাকা মরমী বিকেল
তুলোর বীজের মতো উড়ে এসো ময়ূরপঙ্খী মেঘের দল
ছেলেগুলো আজ ভুল বাসে চড়ে এসে নামো তেপান্তরের মাঠে
ভোরের ডাকে এসো কদম ফুল মেয়েগুলির খোঁপার জন্য
এসো যুবকের পাঠানো মার্জিত সনেটের ছন্দ যুবতীর কোমরবন্ধে
এসো শ্রাবন-মেঘের চুম্বন নীচু বাড়িগুলির সস্তা কলের ঠোঁটে
এসো প্রেমে মোড়া পর্ণকুটির, এসো আলেয়া লোডশেডিংয়ের নিঝুম রাতে
এসো ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী শহরের রোযাকে রোযাকে
এসো সুবাসী চাল, এসো এলোকেশী স্নান,
এসো লাজুক ক্ষণিক দৃষ্টি, এসো পূর্ণ বিকশিত প্রাণ
এসো মরালী গ্রীবা, এসো পরশপাথর
এসো স্বর্ণ মৃগ, এসো অকালবোধন, এসো ভ্রমরদল, এসো আতর
এসো আমাদের স্বপ্নে।